ছবি : শুভ্রনীল ঘোষ
লালবাগ স্টেশনে দেখা হতেই চুন্টে বলল, ‘তুই যে শেষপর্যন্ত আসবি, আমি বিশ্বাস করিনি ভাই৷ এতক্ষণ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কী যে টেনশন খাচ্ছিলাম, তুই ভাবতে পারবি না৷’
কথায় কথায় ‘তুই ভাবতে পারবি না’ বলা অভ্যেস চুন্টের৷ এখনও নিজেকে বদলায়নি৷ সঙ্গে একটা অল্পবয়সি ছেলেকে নিয়ে এসেছে৷ আমার কিট ব্যাগটা তার হাতে তুলে দিয়ে চুন্টে বলল, ‘তুই টোটো করে ফ্যাক্টরিতে চলে যা মন্টু৷ ফোনে সবাইকে খবর দিয়ে দে, ভাস্কর ব্যানার্জি লালবাগে এসে গেছে৷ আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে মণিরুলকে বলে যাবি, যেন লঞ্চ আমাদের জন্য রেডি রাখে৷ ফ্যাক্টরিতে যেতে আমাদের কিন্তু বেলা এগারোটা বেজে যাবে৷’
প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে চুন্টে আমাকে বলল, ‘কাছেই আমার এক ছাত্র জায়েদের চায়ের দোকান৷ ওর হাতে তৈরি চা একবার খেলে তোর বারবার খেতে ইচ্ছে করবে৷ চল, আগে এক গ্লাস চা খেয়ে নিই৷’ কথাটা বলে একটা চায়ের দোকানে ঢুকল৷ অত সকালে বেশ ভিড৷ দোকানের নাম ফুটবল লাভার’স টি শপ৷ খানিক পরে চায়ে চুমুক দিয়ে দেখি, অপূর্ব স্বাদ৷ মনে হল, মিল্ক মেড দিয়ে তৈরি৷
লালগোলা প্যাসেঞ্জারে সকাল ছ’টায় ঠিক টাইমেই লালবাগে পৌঁছে গিয়েছি৷ অত সকালে কুয়াশার মধ্যে চুন্টে যে স্টেশনে হাজির থাকবে, সত্যিই আমি ভাবতে পারিনি৷ আমার ছোটবেলাকার বন্ধু৷ চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর আগে, ওকে প্রথম দেখি, সাউথ সিঁথিতে গোপেশ্বর দত্ত স্কুলের মাঠে৷ ঐক্য সম্মিলনী ক্লাবের প্র্যাকটিসে৷ ফর্সা রোগা পটকা শরীর, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা৷ কে কোনদিন ফুটবলে লাথি মারতে দেখিনি৷ তা সত্ত্বে, ঐক্যর সেক্রেটারি-কাম-কোচ পাঁচুদা আলাপ করানোর সময় আমাকে বলে দিয়েছিলেন, ‘আমি যেদিন প্র্যাকটিসে আসতে পারব না, এই চুন্টেই তোমাদের কোচিং করাবে৷ যা বলবে, মন দিয়ে শুনবে৷ পরে যেন ওর কাছ থেকে আমি কোন কমপ্লেন না শুনি৷’
শুনে একটু ধন্ধে পড়েছিলাম৷ ষোলো-সতেরো বছর বয়সের এইটুকু একটা ছেলে৷ কোচিংয়ের কী জানে? কিন্তু যত দিন যেতে লাগল, ততই টের পেতে থাকলাম, চুন্টে জিনিয়াস৷ ফুটবল নিয়ে প্রচুর পড়াশুনো করে৷ ট্যাকটিকস সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে৷ ভালো ম্যাচ রিডিং করতে পারে৷ আমাদের ঐক্য সম্মিলনী তখন সেকেন্ড ডিভিসন লিগে খেলে৷ প্রতিটা ম্যাচের পরদিন পাঁচুদা চুন্টের উপর ম্যাচ অ্যানালিসিসের দায়িত্ব দিতেন৷ কে কী ভুল বা ঠিক খেলেছে৷ শুনতে আমাদের কার কার ভালো লাগত না৷ কিন্তু বুঝতে পারতাম, চুন্টে যা বলছে, কারেক্ট৷ তখনই মনে হত, ভবিষ্যতে প্রোফেশনাল ফুটবলে গেলেও প্রচুর নাম করবে৷
সে প্রসঙ্গে পরে আসছি৷ তার আগে বলি, চুন্টের জন্য বাড়িতে আমরা কী ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তাম৷ আমরা তখন একই স্কুল... বেনেটোলায় সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশনে৷ হেয়ার বা হিন্দু স্কুলের মতো তেমন নামডাক ছিল না৷ তবুও, চুন্টে ওরফে চন্দ্রপ্রভ চ্যাটার্জি ওই স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারিতে থার্ড হয়েছিল৷ ওকে নিয়ে কী হই হই তখন৷ এখানে সংবর্ধনা, ওখানে সংবর্ধনা৷ ব্যাটাচ্ছেলে যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে দারুণ রেজাল্ট করেছে, আর গিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছে, সেটা আমরা জানতে পারলাম, ঐক্য সম্মিলনী ক্লাব ফার্স্ট ডিভিসন লিগে প্রোমোশন পাওয়ার পর৷ আমাদের মা-বাবারা খোঁটা দিতেন, ‘দ্যাখ, চুন্টে ছেলেটা কী ব্রিলিয়ান্ট৷ ওর পা ধোয়া জল খেলে যদি তোদের কিছু হয়৷’
লালবাগ স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে চুন্টে আমাকে একটা টোটোয় তুলল৷ ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে আমার হাসি পেল৷ ওর পায়ে নাইকি কোম্পানির ঝাঁ চকচকে স্নিকার৷ না, ওর চরণামৃত খাওয়ার দরকার হয়নি৷ আমার মা-বাবা শুনে খুশি হয়েছিলেন, কলকাতার একটা নামী কাগজে স্পোর্টস রিপোর্টারের চাকরি পেয়েছি শোনার পর৷ তার পর একটু আধটু নাম করে ফেললাম, এশিয়ান গেমস, বিশ্বকাপ ফুটবল আর অলিম্পিক গেমস কভার করে এসে৷ ইদানিং কাগজের অফিস থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে আমি সরকারী ফুটবল আকাদেমির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর৷ এই আকাদেমিটা চালায় স্পেনের লা লিগা৷ বার্সেলোনা ক্লাবের আকাদেমি লা মাসিয়ার ঢঙে৷
লালবাগে আমার আসার আসল কারণটা এবার বলি৷ ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে বি টেক করার পর চুন্টে বায়োমেকানিকস নিয়ে এম টেক করেছিল৷ তার পর কয়েক বছর আমাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি৷ কে যেন বলেছিল, চুন্টে আমেরিকায় অস্টিন ইউনিভার্সিটিতে গেছে৷ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে গবেষণা করার জন্য৷ সেইসঙ্গে ক্লোনিং নিয়ে পড়াশুনো করছে৷ আমার সঙ্গে হঠাৎ ওর দেখা সল্টলেক স্টেডিয়ামে৷ সতেরো সালে বিশ্ব যুব ফুটবল ফাইনালের দিন৷ তখন বলেছিল, মুর্শিদাবাদের কোথায় যেন ফুটবল ফ্যাক্টরি খুলেছে৷ আমি ভেবেছিলাম, খেলার বল তৈরি করার কারখানা৷ পরে ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে বলে, ‘না না, আমারটা ফুটবলার বানানোর কারখানা৷ আমি যে সিস্টেম চালু করেছি, তাতে মাসে খান তিরিশেক ফুটবলার প্রোডিউস করতে পারি৷ একেবারে হাই স্ট্যান্ডার্ডের৷’
সত্যি বলতে কী, আমার মাথায় সেদিন কিছুই ঢোকেনি৷ এটুকু বুঝেছিলাম, চুন্টের খ্যাপামো যায়নি৷ তার পর থেকে মাঝে মধ্যেই চুন্টে আমাকে ফোন করত, ‘আয় না ভাই৷ নিজের চোখে দেখে যা৷ আমার ফ্যাক্টরি থেকে নেপাল, ভূটান, তিবব্ত আর আফগানিস্তান বেশ কিছু ফুটবলার নিয়ে গেছে৷ বাংলাদেশ ইম্পোর্ট করেছে৷ তোকে সাবধান করে দিচ্ছি, নেক্সট সাফ গেমসে কিন্তু মার খাবে ইন্ডিয়ান টিম৷ তুই ভাবতে পারবি না ভাই, তিবব্ত যে স্ট্যান্ডার্ডের ফুটবলার নিয়ে গেছে, দেখবি ওরা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে৷ বছর পাঁচেকের মধ্যে ওরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হলে আমি আশ্চর্য হবো না৷’ আমি ভাবতেই পারছিলাম না, এমন দক্ষ ফুটবলার কিভাবে তৈরি করা সম্ভব? কিছু দিন আগে কাগজে দেখলাম, কোন দেশে না কি একটা টিভি চ্যানেল এআই অ্যাঙ্কার দিয়ে কাজ চালাচ্ছে৷ সেটা যদি সত্যি হয়, তা হলে চুন্টের দাবি মিথ্যে হওয়ার কথা নয়৷ ওকি বিখ্যাত ফুটবলারদের ক্লোন বানাচ্ছে?
টোটো ছুটে যাচ্ছে লালবাগ শহরের মধ্যে দিয়ে৷ খানিক পরে শহরের বাইরে শুরু হল আমবাগান, লিচুবাগান৷ লালবাগে কোহিতুর বলে একধরনের আম পাওয়া যায়৷ অসাধারণ তার স্বাদ৷ ঠিক করে নিলাম, ফেরার সময় কয়েক ডজন কিনে নিয়ে যেতে হবে আকাদেমির স্প্যানিশ কোচ এনজো গলদার্দের জন্য৷ টেটোতে চুন্টে গল্প শুরু করল আমার সঙ্গে৷ একবার জিজ্ঞেস করল, ‘কাতার বিশ্বকাপের সময় তোর লেখাগুলো আমি রেগুলার পড়তাম৷ বড় টিমগুলোর ইনসাইড নিউজ তুই কোথায় পেতি রে?’
বিশ্বকাপের আগে আমি বিদেশি কয়েকটা কাগজ সাবস্ক্রাইব করেছিলাম৷ সে কথা বলার দরকার নেই৷ উত্তর না দিয়ে আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমরা কদ্দূর যাচ্ছি রে?’
‘আজিমগঞ্জ বলে একটা জায়গায়৷ রানি ভবানীর নাম নিশ্চয়ই শুনেছিস৷ ওনার জমিদারিতে৷ তুই ভাবতে পারবি না, জায়গাটা কী সুন্দর৷ আমেরিকা থেকে যখন ফিরে এলাম, তখন প্রথমে ফ্যাক্টরি করার জন্য আমি জমি চেয়েছিলাম নিউটাউন এলাকায়৷ কিন্তু ডুপ্লিকেট ফুটবলার তৈরি করতে চাই শুনে সরকারী লোকজন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করল৷ সেইসময় আজিমগঞ্জের এই জায়গাটার খোঁজ দেন করুণা ভট্টাচার্যের এক আত্মীয়৷ করুণাদাকে তো তুই চিনতিস৷ মোহনবাগানের ফুটবলার৷ মুর্শিদাবাদ জেলার প্লেয়ার৷ সেই ভদ্রলোকের জন্য আজিমগঞ্জে একশো একর জমি জলের দরে পেয়ে গেলাম৷ তখন অবশ্য জানতাম না, বর্ষাকালে এখানে বন্যা হয়৷ যাই হোক, টেকনোলজি জানা থাকলে এ সব কোন সমস্যাই নয়৷ তুই ভাবতে পারবি না, ফ্যাক্টরিটা আমি কী চমৎকার সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি৷’
দশটা ফুটবল মাঠ৷ পাঁচটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংস৷ দেডশো বেডের একটা গেস্ট হাউস৷ কর্নাটকের বেলারিতে জেএসডবলিউ যে স্পোর্টস কমপ্লেক্স করেছে, তার থেকে না কি দশগুণ ভালো আজিমগঞ্জের ওর ফ্যাক্টরি৷ ‘তুই ভাবতে পারবি না ভাই, কত খরচ হয়েছে৷’ চুন্টে নিজের প্রতিষ্ঠানের গুণগান করতেই থাকল৷ ভয়ে আমি জিজ্ঞসে করলাম না, কত খরচ করেছে?
৷৷ দুই৷৷
টোটো ভাগিরথীর তীরে সদরঘাটে আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল৷ দেখি, ঘাটে সুন্দর একটা লঞ্চ দাঁডিয়ে আছে৷ তার সর্বাঙ্গে ফুটবলার ফ্যাক্টরির বিজ্ঞাপন৷ পেলে, মারাদোনা, বেকেনবাউয়ার, মেসি... কিংবদন্তি সব ফুটবলারের ছবিতে মোড়া৷ চুন্টে বলল, ‘জলপথে আমার ফ্যাক্টরিতে যেতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে৷ তাই লঞ্চেই ব্রেক ফাস্টের ব্যবস্থা রেখেছি৷ খাওয়ার পর ইচ্ছে করলে খোশবাগে যেতে পারিস৷ ওখানে নবাব সিরাজদ্দোল্লার সমাধি আছে৷ না হলে জিয়াগঞ্জে সিংগার অরিজিৎ সিংয়ের বাডিতে তোকে নিয়ে যেতে পারি৷ থার্ড অপশন কিরীটেশ্বরীর মন্দির৷ একান্ন পীঠের অন্যতম৷ সতীর কিরীটি মানে মুকুট পড়েছিল ওখানে৷’
কিরীটেশ্বরী মায়ের মন্দির যে গ্রামে, সম্প্রতি সেটাকে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন দফতর, ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম বলে ডিক্লেয়ার করেছে৷ কী ভেবে আমি বললাম, ‘চল, তা হলে কিরীটেশ্বরীর মন্দিরটা দেখে যাই৷’
জোয়ারের সময়, স্রোতের উল্টোদিকে লঞ্চ খুব ধীরে এগোচ্ছে৷ কথা বলার সময় দেখলাম, চুন্টে সব খবরই রাখে আমার সম্পর্কে৷ কথায় কথায় বলল, ‘তোকে আমার খুব দরকার৷ অনেকদিন ধরে কথাটা আমি ভাবছি৷’
বললাম, ‘আমি তোর কী কাজে লাগতে পারি?’
‘দ্যাখ ভাই, ইন্ডিয়ান ফুটবল সার্কেলের সবাই তোকে চেনে৷ কল্যাণ চৌবে থেকে নীতা আম্বানি... সব্বাই৷ শুধু চেনে বলাটা ঠিক নয়৷ তোকে সবাই রেসপেক্ট করে৷ নো ডাউট, তুই হচ্ছিস, ইন্ডিয়ার এক নম্বর ফুটবল এক্সপার্ট৷ আনপ্যারালাল৷ আমার ফ্যাক্টরির পাবলিসিটি তোর থেকে আর কে বেশি দিতে পারবে, বল? সারা বিশ্বে একমাত্র বলিভিয়াতে ফুটবলার তৈরির এই রকম ফ্যাক্টরি আছে৷ তার নাম তাইউচি৷ আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি৷ চাইলে তোকে সেখানে পাঠাতে পারি৷ আমার একটাই ইন্টারেস্ট, তুই যদি তোর কলমে একবার লিখিস, ফ্যাক্টরির ডুপ্লিকেট ফুটবলাররাই থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির ফুটবলের ভবিষ্যৎ, তা হলে লোকে তা বিশ্বাস করবে৷ ক্লাব কোচেরা আমার কাছ থেকে ফুটবলার কিনতে ভরসা পাবে৷ তোকে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, সেই ডিল অনেক প্রফিটেবল হবে৷’
আমার চোখ মুখ দেখে চুন্টে বোধহয় বুঝতে পারল, ওর কথাগুলো আমার হজম হচ্ছে না৷ ফুটবল আকাদেমির সঙ্গে ফুটবল ফ্যাক্টরির তফাৎ কি, আমি বুঝতে পারছি না তাই আক্ষেপের সুরে বলল, ‘নিজের চোখে না দেখলে তোর মাথায় ঢুকবে না৷ শোন ভাই, লা লিগার আকাদেমি করে আমাদের কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ ওদের দেশে ট্যালেন্ট আর পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাই নজর দিচ্ছে আফ্রিকা আর এশিয়ান দেশগুলোর উপর৷ শালারা এখানে প্লেয়ার তৈরি করবে, আর নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবে ওদের দেশে৷’
লা লিগা আকাদেমি থেকে মাত্তর তিনদিনের ছুটি নিয়ে বেরিয়েছি৷ তার বেশি আজিমগঞ্জে থাকা যাবে না৷ সে কথা বলতেই মুখ গম্ভীর হয়ে গেল চুন্টের৷ ব্রেক ফাস্টের সময় একেবারে স্পিকটি নট৷ তার পর আমাকে বলল, ‘কেবিনে গিয়ে তুই আপাতত রেস্ট নে ভাই৷ আমি উপরে ডেক-এ গিয়ে বসছি৷ আমাকে কয়েকটা ফোন করতে হবে৷’
কিরীটেশ্বরী মন্দির ঘুরে বেলা এগারোটার সময় আমরা পৌঁছলাম চুন্টের ফ্যাক্টরিতে৷ পুরোটা কংক্রিট দেওয়াল দিয়ে ঘেরা৷ আগে থেকে বোধহয় বলা ছিল৷ গেটের সামনে নীল শাড়ি পরা গোটা পঞ্চাশ একই রকম দেখতে মেয়ে দু’পাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে৷ ওরা আমাদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিল৷ কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে আমাকে বরণ করল৷ পাশ থেকে চুন্টে ফিসফিস করে বলল, ‘এরা সব রোবোট৷ আমার ফ্যাক্টরিতেই তৈরি৷ এরাই আমার এমপ্লিয়৷’
‘তুই রোবোট তৈরি করিস না কি?’
‘আমার আসল ইনকাম তো টাই৷ আমেরিকাকে অনেক দিন সার্ভিস দিয়েছি৷ একটা সময় জার্মানিতে ছিলাম৷ সব কিছু বদলে যাচ্ছে রে ভাই৷ সারা বিশ্বে রোবোট জওয়ানদের খুব চাহিদা৷ যুদ্ধ লাগলে কেউ আর লোকক্ষয় করতে চায় না৷ বিশেষ করে যে দেশের লোকসংখ্যা কম, অথচ ক্ষমতার আস্ফালন বেশি৷ আমেরিকান আর্মিতে এখন অর্ধেকই আমার তৈরি রোবোট৷ নর্থ কোরিয়াতে পার্সেন্টেজ তার থেকে বেশি৷ আর্মিতে রোবোট সাপ্লাই করে যে টাকা রোজগার করেছি, তার অনেকটাই আজিমগঞ্জে ঢাললাম৷ স্রেফ ফুটবলকে ভালবাসি বলে৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পরের বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া খেলবেই যদি কল্যাণরা আমার হেল্প নেয়৷ তুই এই কথাটার কানে পৌঁছে দিতে পারবি ভাই?’
আমতা আমতা করে বললাম, ‘আগে তোর ফুটবলারদের তো দেখি, তার পর ডিসিশন নেবো৷’
স্বাগত পর্ব মেটার পর কেউ একজন আমার হাতে একটা বুকলেট ধরিয়ে দিলেন৷ তার পর গল্ফ কার্টে তুলে নিয়ে আমাকে চুন্টে বলল, ‘ফ্যাক্ট্ররিতে মোট ছাব্বিশটা ব্লক আছে৷ ‘এ’ থেকে ‘জেড’ পর্যন্ত৷ বিশাল এরিয়া৷ বুঝতেই পারছিস, একদিনে সব দেখে উঠতে পারবি না৷ চল, আমরা ‘এ’ থেকে শুরু করি৷’
ব্লক এ-র গেটে এক ফুটবলারের বিশাল কাট আউট৷ কোথা দেখেছি, অথচ নামটা মনে পড়ছে না৷ চুন্টেকে জিজ্ঞেস করলে হাসবে৷ হঠাৎ চোখে পড়ল, এক জায়গায় লেখা আছে, অসওয়াল্ডো আর্দেলিস৷ পডে আপসোস হতে লাগল৷ ইস, এত বড় একজন প্লেয়ার, তাঁর নামটা আমি মনে করতে পারছিলাম না? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন এই আর্জেন্টিনীয়৷ ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের প্লেয়ার ছিলেন৷ তখন মারাদোনা বা মেসি কোথায়?
পাসারেল্লা, কেম্পেসের মতো এত বড বড আর্জেন্টাইন প্লেয়ার থাকতে আর্দিলিস কেন? প্রশ্নটা শুনে চুন্টে বলল, ‘তোর অন্তত জানা উচিত৷ ইংলিশ ফুটবলে একটা সময় বিদেশি ফুটবলার ব্যানড ছিল৷ প্রায় পাঁচ দশক ধরে লাতিন আমেরিকা বা অন্য কোন কন্টিনেন্টের কোন প্লেয়ার ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ পেত না৷ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর টটেনহ্যাম হটস্পার আর্দিলিসকে প্রথম নিয়ে আসে লাতিন আমেরিকা থেকে৷ বল প্লে দেখে তো বটেই, ইংরেজরা মোহিত হয়ে যান আর্দিলিসের স্টেপ আর স্কিল দেখে৷ আমার ফ্যাক্টরির ব্লক এ-তে যাদের আমি তৈরি করছি, তারা সব আর্দিলেস ঘরানার গুণগুলো পেয়েছে৷ দু’জন বিক্রি হয়ে গেছে৷ আপাতত দশজন প্লেয়ার আমার কাছে মজুত আছে৷ কিভাবে এদের প্রোগ্রামিং করেছি, তুই ভাবতে পারবি না৷ সে বিরাট সায়েন্টিফিক ব্যাপার৷ ভিতরে চল, ছেলেদের আমি ডেকে পাঠাচ্ছি৷ তুই পরীক্ষা নিতে পারিস৷’
কথাগুলো চুন্টে এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল যে, আমার অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল না৷ একটু পরেই ছেলেগুলো এসে হাজির৷ বয়স পনেরো ষোলো বছরের বেশি বলে মনে হল না৷ প্রায় একই হাইট, পাঁচ আট থেকে পাঁচ নয় ইঞ্চি হবে৷ চুন্টে বলল, ‘এরা কিন্তু আর্জেন্টিনার সিটিজেন৷ পাঁচজন বুয়েনস আইরেস, তিনজন মেনডোজা আর দু’জন পুয়েরতো সান্টা ক্রুজের৷ দেশ থেকে বেছে বেছে আমি এদের নিয়ে এসেছি৷ উল্লেখযোগ্য হল, এদের সবাই ইন্ডিয়ান অরিজিন৷ এদের কারোর মা অথবা কারোর বাবা ভারতীয়৷ ফলে, যদি চায়, তা হলে ইন্ডিয়ান ফুটবল টিমে নিশ্চিতভাবে খেলতে পারবে৷’
বললাম, ‘ম্যাচে এরা কেমন খেলে, কী করে বুঝব?’
‘এদের গেম তুই রোববার আর বুধবার দেখতে পাবি৷ যেমনটা নামকরা বিদেশি লিগগুলোতে হয় আর কি৷ আমিই দু’দিন সব ব্লকের ট্রেনিদের মিক্স করে গেম খেলাই৷ এরা কী রকম খেলে তার খানিকটা আইডিয়া তখন তুই পেয়ে যাবি৷ তা ছাড়া তোকে কয়েকটা সিডি দেবো৷ আমাদের গেস্ট হাউসে হোম থিয়েটার আছে৷ তুই সেখানে সিডি চালিয়ে খানিকটা আন্দাজ পাবি৷ তার আগে যদি এদের কিছু জিজ্ঞেস করতে চাস, তা হলে করতে পারিস৷ এরা স্প্যানিশ, ইংলিশ আর হিন্দিতে কথা বলতে পারে৷
বুয়েনস আইরেসের ছেলেটার নাম বলল, আলেজান্দ্রো চ্যাটার্জি৷ তার মানে ওর বাবা বাঙালি৷ ইংরেজিতে কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এবার কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটা দেখেছিলে?’
আলেজান্দ্রো বলল, ‘হ্যাঁ সেনির৷ এই ফ্যাক্টরিতে যতজন ট্রেনি আছে, তাদের সবাইকে সেনির চন্দ্রাপ্রাভা কাতারে নিয়ে গেছিলেন৷ ওখানে বসে আমরা ফাইনাল ম্যাচটা দেখেছি৷’
‘মেসিকে তোমাদের কেমন লেগেছে?’
‘কার সম্পর্কে প্রশংসা বা নিন্দা করা আমাদের বারণ আছে সেনির৷ আমরা প্রোফেশনাল প্লেয়ার৷’
বুঝতে পারলাম, চুন্টে সেভাবেই ওদের প্রোগ্রামিং করে দিয়েছে৷ কথাবার্তা তাই জমল না৷ বেলা প্রায় বারোটা বাজে৷ ছেলেগুলোকে হোস্টেলে পাঠিয়ে চুন্টে বলল, ‘চল, এ বার বি ব্লকে যাই৷ ওটা বেকেনবায়ারের নামে৷ জার্মানদের জাত্যাভিমান সম্পর্কে তো তোর খানিকটা আইডিয়া আছে৷ ভাই, জার্মানি ছেড়ে কেউ আসতে চায় না৷ তাই সাত আটজনের বেশি ছেলে পাইনি৷ বুন্দেশলিগায় খেলতেন রবিন দত্ত বলে একজন৷ তাঁর বাবা কলকাতার লোক৷ রবিন পরে জার্মান ক্লাবের কোচ হয়েছিলেন৷ উনি ছাড়া আমাকে আর একজন হেল্প করেন৷ তিনি হলেন আবসার সাত্তার৷ বুন্দেশলিগায় একটা সময় রেফারিং করতেন৷ এখন হেইলবোর্নে থাকেন৷ আদতে বাগনান বা উলুবেডিয়ার লোক৷’
গল্ফ কার্টে করে চুন্টে আমাকে বি ব্লকে নিয়ে গেল৷ গেটের মুখে ফ্রাঞ্জ বেকেনবায়ারের বিরাট কাট আউট৷ তার নীচে লেখা ডের কাইজার৷ জার্মানরা ওকে এই নামেই সম্বোধন করেন৷ এমনি এমনি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন না৷ খেলোয়াড হয়ে বিশ্বকাপ জয়, পরে কোচ হয়ে৷ এমন কতিত্ব ব্রাজিলের মারি জাগালো আর ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশঁ ছাডা আর কার নেই৷ ‘এ’ ব্লকের ভিতরে আমি ঢুকিনি৷ বেকেনবায়ারের ব্লকে ঢুকে আমার মাথা ঘুরে গেল৷ ভিতরে একটা ফুল সাইজ মাঠ৷ এক পাশে স্টেডিয়াম, অন্য দিক মিউজিয়াম৷ সেখানে বিশাল ইলেকট্রনিক বোর্ড৷ তাতে ১৯৭৪ আর ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে জার্মান টিমের ম্যাচ দেখানো হচ্ছে৷
আমার সামনে সাত-আটজন ট্রেনি দাঁড়িয়ে৷ চুন্টে বলল, ওরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত৷ মিউনিখ, বার্লিন, কার্লসরুহে, স্টুটগার্ট থেকে ওদের ধরে এনেছে৷ আমাকে বলতে লাগল, ‘বেকেনবায়ার নামটা শুনলেই আমাদের কী মনে হয়, বল তো ভাই৷ সুইপার বা লিবেরো৷ এই ব্লকে আমি শুধু এই পজিশনের প্লেয়ার তৈরি করছি৷ এই ছেলেগুলো যেমন ডিফেন্স করতে পারে, তেমনই পারে নিঃশব্দে অ্যাটাকে যেতে৷ রবিবারের ম্যাচে এরা যখন খেলবে, তখন বুঝতে পারবি, নিঁখুত টাইমে ট্যাকল কাকে বলে৷ একেবারে বেকেনবায়ারের মতো৷ আমাদের দেশে একজনই মাত্তর জন্মেছিল৷ গৌতম সরকার৷ ভারতের এখনকার টিমের কেউ তো ট্যাকলই করতে পারে না৷ এই সন্দেশ জিঙ্ঘান বলে ছেলেটাকে স্টিমাচ কেন খেলায় বল তো?’
‘বি ’ ব্লক ঘুরে দেখতেই বেলা একটা বেজে গেল৷ দূরে কোথা ঘণ্টা বাজছে৷ শব্দটা কানে যেতেই চুন্টে শশব্যস্ত, ‘এই রে, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে৷ ডাইনিং হলে যেতে হবে৷ এখন আর কোন ট্রেনিকে পাওয়া যাবে না৷ লাঞ্চ সেরে খানিকটা সময় তুই রেস্ট নিস৷ তার পর আবার বেরনো যাবে৷’ বাইরে বেরিয়ে চুন্টে আমাকে নিয়ে গল্ফ কার্টে উঠে বসল৷ পর পর সব ব্লক বিশ্বখ্যাত প্লেয়ারদের নামে৷ সি-তে কার্লেস ভলদেরামা আর কাফু, ডি-তে ডুঙ্গা, ই-তে ইউসেবি, এফ-তে ফিগো আর ফ্রাঙ্কো বারেসি, জি-তে গার্ড মুলার আর গর্ডন ব্যাঙ্কস৷ দু’পাশের ব্লকগুলো দেখতে দেখতে যাচ্ছি৷ দু’একটা ব্লক মিস করলাম৷ চোখে পড়ল জে-তে জুরগেন ক্লিন্সম্যান, কে-তে কাকা, এল-এ লোথার ম্যাথেউস, এম-এ এমবাপে আর মালদিনি, এন-এ নেইমার৷ পরের সারির ব্লক পি-তে পাসারেল্লা, আর-এ রোনাল্ডো আর রোবার্তে কর্লেস, এস-এ সুয়রেজ, এক্স-এ জাভি, ওয়াইতে ইয়াসিন ( লেভ ), জেড-এ জিদান৷
ডাইনিং হলে খেতে বসে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ব্লকের নামগুলো কে বেছে দিয়েছে রে চুন্টে?
বলল, ‘বুঝেছি, কেন জানতে চাইছিস? অনেকগুলো বড় নাম মিসিং, তাই না? কেন, তোকে বলছি৷ এমন কিছু প্লেয়ার আছেন, যাঁদের কপি করা মুশকিল৷ পেলে, গ্যারিঞ্চা, পুসকাস, ডি’স্টিফানো, জোহান ক্রুয়েফ, জর্জ বেস্ট, মারাদোনা, মেসি৷ এঁদের ভগবান নিজের হাতে তৈরি করে পাঠিয়েছেন৷ আমার সাধ্য নেই ভাই, ওদের ডুপ্লিকেট প্লেয়ার বানানোর৷’
বললাম, ‘তোর এখান থেকে প্লেয়ার নিলে ইন্ডিয়ান টিমের কী উন্নতি হবে?’
‘আরে, কী বলছিস তুই৷’ চুন্টে বলল, ‘ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইন্ডিয়া এখন একশোর আশপাশে৷ কিন্তু আমার ফ্যাক্টরি থেকে আমার মনোমতো প্লেয়ার নিলে ইন্ডিয়া প্রথম তিরিশে ঢুকে যাবে৷ লাইন আপটা তুই ভাব! গর্ডন ব্যাঙ্কস আর লেভ ইয়াসিনের মতো গোলকিপার৷ কাফু, কার্লেস রেবার্তে, মলদিনি আর বারেসির মতো ডিফেন্ডার৷ মাঝমাঠে বেকেনবাউয়ার, ম্যাথেউস, জিদান, জাভি, ডুঙ্গা, ইউসেবি আর ফিগোর ডুপ্লিকেট৷ ফরোয়ার্ড লাইনে ক্লিন্সম্যান, রোনাল্ডো আর এমবাপের মতো যা অ্যাটাকিং প্লেয়ার৷ ভাবতে পারছিস, থ্রি-য়ান-ফোর-টু সিস্টেমে ইন্ডিয়ান টিমটা কোন লেভেলে খেলবে? আমার তো মনে হয়, জাপানকে বলে বলে তিন গোল মারবে৷ সাউথ কোরিয়াকে পাঁচ গোল৷ চিনকে সাত গোল৷ এবার এশিয়ান গেমসে পাঁচ গোল খাওয়ার বদলাটা অন্তত নিতে পারবে৷’
‘তোর ফ্যাক্টরির এই ষোলোজন প্লেয়ার নেওয়ার জন্য কত টাকা দিতে হবে এআইএফএফকে?’
‘যদি আমাকে কোচ করে তা হলে একটা পয়সা দিতে হবে না৷ কিন্তু স্টিমাচকে যদি রেখে দেয়, তা হলে ওয়ান মিলিয়ন ডলার দিয়ে গ্রুপটাকে কিনতে হবে৷ তোকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, আমার কোচিংয়ে ইন্ডিয়ান টিম যদি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে না পারে, তা হলে আমিই ফেডারেশনকে ওয়ান মিলিয়ন ডলার কমপেনশেসন দেবো৷ আরেকটা শর্ত, তোকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে৷ টিমটাকে বুস্ট করার জন্য তোর মতো জার্নালিস্টকে আমার দরকার৷’
মানেটা আমার বোধগম্য হল না৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, এর পর চুন্টে যে কথাটা বলল, তা শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম৷ ‘এত অবাক হচ্ছিস কেন? তোকে নিয়ে আমার একটা প্ল্যান আছে ভাই৷ তোকে আমি ছাড়ছি না৷ ফ্যাক্টরিতে প্লেয়ার তৈরির পাশাপাশি এ বার থেকে আমি কোচ, রেফারি আর ফুটবল সাংবাদিক বানাব৷ কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার আজিমগঞ্জে আসতে রাজি হয়ে গেছেন৷ রেফারি পিয়েরলুইগি কোলিনা আসতে চান৷ ইতালিয়ান রেফারি, ওয়ার্ল্ডের বেস্ট৷ ইতালি বিশ্বকাপে তুই তো তাঁকে দেখেছিস৷ সাংবাদিক ব্রায়ান গ্ল্যানভিলকে আমি আনতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু বয়স হয়ে গেছে, উনি এতোদ্দূর আসতে পারবেন না৷ ওর জায়গায় তোর কথা আমি ভেবে রেখেছি৷ এসেছিস যখন, তখন আর তোকে ছাড়ছি না৷ তোকে বলা হয় নি৷ আমার ফ্যাক্টরিটা এমন ভাবে তৈরি, আমি না চাইলে কেউ এখান থেকে বেরতে পারে না৷’
গলার স্বর বদলে গেল চুন্টের৷ তখনই আমার মনে পডল, গেট দিয়ে ঢোকার সময় মোবাইল ফোনটা সিকিউরিটি গার্ডরা রেখে দিয়েছিল৷ পাগলা চুন্টের মতলবটা যে তখন বুঝিনি৷ একটা কথাই তখন মনে হতে লাগল৷ কায়দা করে চুন্টেকে কোন মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার৷ তার পর ভাবব, কীভাবে ফ্যাক্টরি থেকে ছুটকারা পাবো৷
Powered by Froala Editor